সারা দেশের শিশু-কিশোরদের জন্য খেলার মাঠের সংস্থান করতে বৃহৎ পরিকল্পনা প্রয়োজনঃ ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)

নগর দর্পণ ডেস্কঃ

ঢাকার কলাবাগানের উত্তর ধানমন্ডি এলাকার তেঁতুলতলা মাঠে থানা নির্মাণ না করে সেখানে শিশু-কিশোরদের জন্য খেলার স্থান হিসেবে ব্যবহার করবার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে স্বাগত জানানোর সাথে সাথে সরকারের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ প্রকাশ করছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। পাশাপাশি তেঁতুলতলা মাঠে শিশুদের খেলবার অধিকার নিশ্চিত করবার জন্য এলাকাবাসী, সামাজিক সংগঠনসমূহ, গণমাধ্যম ও গণমানুষ সহ সংশ্লিষ্ট যারা বিরামহীনভাবে শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে গিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে আইপিডি।

একইসাথে সরকারের এই ঘোষণা শিশুদের খেলাধূলা করবার মৌলিক অধিকারের প্রতি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বহিঃপ্রকাশ – যাকে উপজীব্য করে সারা দেশের নগর ও গ্রামীণ এলাকায় পরিকল্পনামাফিক খেলার মাঠ তৈরি করবার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ এখনই নেয়া দরকার বলে মনে করে আইপিডি। আধুনিক নগর পরিকল্পনায় খেলার মাঠ-পার্ক-উদ্যান কে স্বাস্থ্য অবকাঠামো বিবেচনা করা হয়, পাশাপাশি এই ধরনের নাগরিক সুবিধাদি সমাজে অপরাধের প্রবণতা ও কমায় বহুলাংশে। ফলে এই ধরনের মাঠকে কেন্দ্র করে সামাজিক সম্পর্ক-যোগাযোগ ও কমিউনিটিভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে উঠে, ফলে খেলার মাঠকে শৃংখলা ও নিরাপত্তা অবকাঠামো হিসেবে ও বিবেচনা করা যেতে পারে। আমরা সকলেই জানি, আমাদের নগর এলাকায় সুস্থ বিনোদনের অভাবে শিশু-কিশোরদের অনেকেই মাদকাসক্তি, কিশোর গ্যাং সহ নানা ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে; অনেকেই অবষাদগ্রস্ত ও বিষণ্ন হয়ে পড়ছে। শুধুমাত্র থানা বা জেলখানা নির্মাণের মাধ্যমে এই ভয়ংকর সামাজিক সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও আমাদের শিশুকিশোরদের বেড়ে উঠবার জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে এলাকাভিত্তিক খেলার মাঠ তৈরী করে দিতে পারিনি, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক বাস্তবতা। পাড়া-মহল্লায় যে সকল খেলার মাঠ ছিল, সেই মাঠগুলোও বিভিন্ন প্রভাবশালীদের দখল কিংবা নানা অবকাঠামো নির্মাণের কারণে খেলবার জায়গা সংকুচিত হয়েছে কিংবা হারিয়ে গেছে। অনেক খেলার মাঠ আবার বিশেষ কিছু শ্রেণী বা গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত, যেখানে সাধারণ জনসাধারণের জন্য অবারিত খেলবার সুযোগকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। নগর এলাকায় কিছু খেলার মাঠকে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে পূনঃউন্নয়নের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করা হলেও ঘাস নষ্ট হয়ে যাবার অজুহাত দিয়ে সেখানে শিশু-কিশোরদের খেলবার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। আমাদের গ্রামীণ এলাকায় শিশু-কিশোরদের সুস্থ বিনোদনের জন্য প্রয়োজনীয় মানসম্মত খেলার মাঠের সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল। আমাদের কিশোরীদের খেলাধূলা করবার সুযোগ নগর কিংবা গ্রামীণ এলাকা-সবক্ষেত্রেই একেবারে নগণ্য। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্র-সরকার এবং নাগরিক সমাজ-সাধারণ মানুষের যে উপলদ্ধি তৈরি হয়েছে, একে কেন্দ্র করে শিশু-কিশোর সহ সকলের খেলাধূলা করবার অধিকারকে কার্যকরভাবে নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত উপায়ে সারাদেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ও সকলের জন্য উন্মুক্ত খেলার মাঠ তৈরি করবার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাথে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ রাষ্ট্র ও সরকারকে নিতে হবে। এই প্রেক্ষিতে সমগ্র দেশের নগর ও গ্রামীণ এলাকায় সকলের জন্য খেলার মাঠ ও খেলবার সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে নিম্নের প্রস্তাবনাসমূহ তুলে ধরছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)ঃ

– নগরে এলাকায় বিদ্যমান খেলার মাঠসমূহকে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে মাঠসমূহের ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীর সমন্বয়ে কমিটি করা প্রয়োজন।

– বিদ্যমান যে সকল খেলার মাঠে ক্লাব কিংবা অন্য কারো দখলে আছে সেগুলো অবিলম্ব দখলমুক্ত করে এলাকাবাসির খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ক্লাব কিংবা অন্য কোন বিশেষ গোষ্ঠীকে কোনভাবেই খেলার মাঠ এর বরাদ্দ দেয়া যাবে না।

– প্রতিটি ওয়ার্ড ও এলাকায় শিশুদের হাঁটা দূরত্বে খেলার অধিকার নিশ্চিত করতে মহাপরিকল্পনা ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার মাধ্যমে খেলার মাঠ তৈরি করবার উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি অব্যবহৃত জমি ও খাসজমিসমূহকে চিহ্নিত করবার মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক খেলার মাঠ তৈরি করবার উদ্যোগ নেয়া এখনই দরকার।

– নগর এলাকায় ভূমি পূনঃউন্নয়ন, ব্লক উন্নয়ন, ভূমি পূনঃবিন্যাস, ভূমি স্বত্ব প্রতিস্থাপন (ট্রান্সফার অফ ডেভেলপমেন্ট রাইটস বা টিডিআর) এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ তৈরি করবার উদ্যোগ নিতে হবে।

– নতুন বর্ধিত নগর এলাকায় ভূমি ব্যাংক তৈরি করবার মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য খেলার মাঠসহ প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধাদির জন্য জায়গার সংস্থান করে রাখা দরকার।

– বেসরকারী ও সরকারী সকল ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে জনসংখ্যা অনুপাতে ও বিভিন্ন বয়সের উপযোগী খেলার মাঠ

– ছোট শিশুদের খেলার স্থান (প্লে-লট), কিশোর-কিশোরীদের খেলার মাঠ (প্লে গ্রাউন্ড) ও বড়দের খেলার মাঠ (প্লে ফিল্ড)

– প্রয়োজনীয় সংখ্যায় তৈরি করতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে কোন অবস্থাতেই এই সকল মাঠসমূহের শ্রেণী পরিবর্তন করে অন্য কোন ব্যবহার করা যাবে না।

– খেলার মাঠে যথেষ্ট পরিমাণ বসবার জায়গা, খেলাধুলার সরঞ্জাম এবং পর্যাপ্ত সুবিধাদি দিতে হবে। খেলার মাঠসমূহের উপযোগিতা বাড়ানোর জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মাঠগুলোতে ফ্লাডলাইটের ব্যবস্থা করা দরকার ।

– বিভিন্ন মেলা কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য খেলার মাঠ বরাদ্দ দেয়ার বিদ্যমান সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। খেলার মাঠে যাতে অবৈধভাবে ভাসমান বাজার/ট্রাক-রিকশা স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত না হয় সেইদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

– বর্তমান সরকারে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ প্রকল্প ও উপজেলা পর্যায়ে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের যে উদ্যোগ চলমান আছে, তার মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক খেলার মাঠ তৈরী করবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

– সরকারীভাবে সারা দেশের নগর ও গ্রামীণ এলাকায় খেলার মাঠের পরিকল্পনা



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

RSS
Follow by Email