রাজধানীর গরুর হাট বানিজ্য ও করোনা ভাইরাস

দেশে করোনা মহামারী আকার ধারন করেছে, প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত লোক মারা যাচ্ছে করোনাতে। দুই সহস্রাধিক মানুষ প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে। গত ১৩ জুলাই ২০২০ তারিখের জনপ্রসাশন মন্ত্রনালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে এবারের করোনা সংক্রামন বৃদ্ধি ঠেকাতে সকল সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকলকে আবশ্যিকভাবে কর্মস্থলে থাকার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। অপরদিকে আবার সকল যানবাহন চালু থাকবে। তাহলে সরকার আসলে কি চাইছে বোঝা মুশকিল। অনুমান করা কঠিন কে বেশি শক্তিশালী, সরকার নাকি ব্যবসায়ীরা, যারা বাস-ট্রাকের পরিবহন ব্যবসায়ী, নাকি গরুর ইজারাদাররা। হাটগুলোর মাধ্য সত্যি সত্যি করোনা ছড়ালে সেটি শুধু ঢাকা শহরে ছড়াবে না, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের হতে হবে আরও সতর্ক ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

 

২১ তারিখে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা গেল এবছর কোরবানীর হাট বসবে ১৭টি। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের আপত্তি ছিল এবারের হাট বসানোতে। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য পরাশক্তির কাছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়নের আপত্তি বা পরামর্শ কোন গুরুত্বই পেলো না। যদিও লেখা বিভিন্ন এলাকার মাঠ ও খালি জায়গার কথা কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আবাসিক এলাকার রোডের মধ্যে হাট বসানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইজারাদাররা।

 

সরকার কি আসলেই করোনা নিয়ে চিন্তিত নয়? নাকি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী হাটের ইজারাপ্রাপ্তরা। উত্তরে মাননীয় মেয়র আতিকুল ইসলাম চেষ্টা করেছেন বলতেই হবে। আবাসিক এলাকাগুলো থেকে হাট স্থানান্তর করে একটু দুরে বসিয়েছেন। তিনি নিজেও অনলাইনের মাধ্যমে কোরবানীর পশু কেনা-কাটার জন্য হাটগুলোকে উৎসাহ দিয়েছেন। দক্ষিণের মাননীয় মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস উত্তরের মেয়র মহোদয়ের মত কঠোর হতে পারেননি। তিনি আবাসিক এলাকায়ও হাট দিয়ে দিয়েছেন। মেয়র মহোদয় হাটের লোকেশন জানেন না কিন্তু অনুমতি দিয়েছেন এরকম হওয়ার কথা নয়।

 

বিভিন্ন সূত্রমতে জানা যায়, শুরুতে ২৬টি পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুই সিটি কর্পোরেশন। সেখান থেকে নেমে এসে এখন ঢাকা উত্তর  সিটি কর্পোরেশনে ছয়টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৬টি হাট বসবে এরকম নিউজ দেখেছিলাম ১৫ জুলাই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। সেই হাট গুলোর লোকেশন পর্যালোচনা করে দেখা যায় ১২ টি হাটের মধ্যে ১০ টি অস্থায়ী হাট ও ২ টি স্থায়ী হাট। ১০ টি অস্থায়ী হাটের লোকেশন আবাসিক ঘনবসতি এলাকা থেকে যথেষ্ট দুরত্ব রেখে নির্ধারন করা হয়েছিল।

১৫ জুলাই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত দুই হাটের তালিকা অনুযায়ী ম্যাপ

 

সর্বশেষ ২১ তারিখের পত্রিকার সংবাদে দেখতে পাচ্ছি ১৭টি হাট বসবে। ঢাকা উত্তর তাদের সিদ্ধান্ত পূর্বের মতই ৬টি হাট রেখেছে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি ঢাকা দক্ষিণ ৬টি হাট এর পরিবর্তে ১১ টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর মধ্যে কয়েকটি আছে সরাসরি ঘনবসতি পূর্ণ আবাসিক এলাকায়।

 

বিভিন্ন সূত্রমতে,  বাঁশ, খুঁটি ও শামিয়ানা নিয়ে ব্যস্ত ইজারাপ্রাপ্ত ও ব্যাপারিরা, আবাসিক এলকারা বিভিন্ন রোডে তারা গরু রাখার ব্যবস্থা করতে শুরু করে দিয়েছে। বনশ্রী আবাসিক এলাকার বিভিন্ন রোডের ভিতরে হাট বসানোর জন্য ইতিমধ্যে ইজারাদার বাঁশের খুঁটি দিয়ে দিয়েছেন।

 

২৭ জুলাই কোরবানির হাট শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাবে ২৩/২৪ তারিখ থেকেই হাটে গরু রাখা ও গরু বিক্রেতারা আসতে শুরু করবে। যদিও বলা হচ্ছে হাট ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেশ কিছু গাইডলাইন দিয়েছে। হাটের প্রবেশপথে বাধ্যতামূলক হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে, মাস্ক পরতে হবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন কি আসলেই সম্ভব। যেখানে মানুষের জীবনের চেয়ে কোরবানীর পশুর দাম বেশি। সেখানে বাধ্যতামুলক হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও ক্রেতা বিক্রতাদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাওয়া রীতিমত হাস্যকর বিষয়।

 

ঢাকা দক্ষিণে উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজ মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট, কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠ-সংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ, আফতাবনগর ব্লক-ই, এফ, জির সেকশন ১ ও ২ নম্বর এলাকা, মেরাদিয়া বাজার, দনিয়া কলেজ মাঠ-সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা মাঠ, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল-সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আমুলিয়া মডেল টাউনের খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা। উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ছয়টি পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে একটি স্থায়ী হাট ও পাঁচটি অস্থায়ী হাট। স্থায়ী হাটটি গাবতলীতে বসবে। অস্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে- উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ ভবন পর্যন্ত খালি জায়গা; কাওলা শিয়ালডাঙ্গা-সংলগ্ন খালি জায়গা; ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ-সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গা; ভাটারা (সাইদনগর) পশুর হাট; এবং উত্তরখান মৈনারটেক হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা।

ঢাকা দক্ষিণের সর্বশেষ ইজারা অনুযায়ী হাটের লোকেশন ম্যাপ

 

এখনও সময় আছে, আবাসিক এলাকার ভিতরের হাটগুলোকে একটু সরিয়ে পার্শ্ববর্তী খালি জায়গায় নিয়ে যাওয়ার। এতে সকলের জন্য মঙ্গল বয়ে আসবে। কিছুটা হলেও নিরাপদে থাকবে আমাদের প্রাণের শহর ঢাকা। এই ঈদের খুশি যেন ম্লান না হয়ে যায় করোনার থাবায়। আর কেউ যেন প্রিয়জনকে না হারায় কিরোনায় আক্রান্ত হয়ে। করোনা যেন ভয়ানকমাত্রায় না ছড়াতে পারে, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রাখতে পারেন দুই মেয়র মহোদয়, পুলিশ ও প্রশাসন। নাগরিকওদেরও হতে হবে আরও সচেতন। প্রয়োজন হলে তাদেরও বর্জন করতে হবে এসব হাট। সীমিত করতে কবে হাটে যাওয়া-আসা।

 



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

RSS
Follow by Email