সবাই মিলে সবার ঢাকা

নগর দর্পণ ডেস্কঃ

ঢাকা, ২৭ নভেম্বর ২০১৯,
গুলশানে ডিএনসিসি’র নগর ভবনে গতকাল বিকাল ৩ টায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো “16 Days of Activism Campaign” পালন উপলক্ষ্যে একটি সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ডিএনসিসির মাননীয় মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম এই আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

মাননীয় মেয়রের বলেন আপনারা জানেন “সবাই মিলে সবার ঢাকা” ভিশনকে সামনে রেখে আমি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচিত হওয়ার পরে আমরা “সবাই মিলে সবার ঢাকা” প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। যার মূলকথা হচ্ছে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ঢাকা গড়ে তোলা। এই শহরকে সকল মানুষের জন্য নিরাপদ ও বাস উপযোগী করে তোলা। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন-বান্ধব একটি শহর গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য।

নারী ও শিশুদের উপর নির্যাতন বন্ধে বিশ্বব্যাপী প্রচারাভিযানের অংশ হিসাবে 16 Days of activism বা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষকাল পালন হয়ে আসছে। ১৯৯১ সালে নারী ও মেয়ে শিশুদের উপর নির্যাতন বন্ধে উইমেন্স গ্লোবাল লিডারশিপ ইনস্টিটিউট আন্তর্জাতিকভাবে 16 Days of activism উদযাপন শুরু করে। পরবর্তীতে সেন্টার ফর উইমেন লিডারশিপ এর তত্ত্বাবধানে প্রতিবছর বিশ্বের প্রতিটি দেশে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে অনুষ্ঠানটি উদযাপিত হয়ে আসছে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা রোধ এবং নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তা রক্ষায় তাদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই মূলত এই মহতী উদ্যোগ।


২৫ নভেম্বর “নারী নির্যাতন বিলোপ দিবস” থেকে ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পর্যন্ত পালন করা হয়ে থাকে। এই প্রচারাভিযান শিশু, নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা রোধ ও দূরীকরণের আহ্বান জানাতে বিশ্বজুড়ে ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোর একটি সাংগঠনিক কৌশল হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ এসডিজিতেও এই প্রসঙ্গটি এসেছে গুরুত্ব সহকারে। এসডিজির ১১ নম্বর লক্ষ্য হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, প্রতিকূলতা-সহিষ্ণু এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলা এবং ৫ নম্বর লক্ষ্য হলো নারীর ক্ষমতায়ন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কীভাবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর গড়ে তুলতে পারি? একটি শহর অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে তখনই যখন নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ সবাই নিরাপদে ফুটপাত ও সড়ক পার হতে পারবে, গণপরিবহনে উঠতে পারবে, পাবলিক প্লেসগুলোতে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবে, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষেরা বহুতল ভবনে কারো সাহায্য ছাড়াই যেতে পারবে, ভবনগুলোতে র‍্যাম্প থাকবে, পরিবার ও সমাজ হবে সহিংসতামুক্ত ইত্যাদি। বিশ্বব্যাপী এ ধরণের অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর গড়তে বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম দেখা যায়। যে দেশ যত উন্নত সে দেশের শহরগুলো ততটাই অন্তর্ভুক্তিমূলক।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শহরের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি নারী, শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য নিরাপদ। নারী ও শিশু নির্যাতন সেখানে থাকবে না। নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে খুব শীঘ্রই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ড, পাবলিক প্লেস, মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্সে অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হচ্ছে। যাতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষেরা নারী ও শিশু নির্যাতন সম্পর্কে অভিযোগ ও পরামর্শ জানাতে পারেন। প্রাপ্ত অভিযোগ ও পরামর্শগুলো নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলর, স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা, এনজিও কর্মীর সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হবে। তাছাড়া সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যবৃন্দ, ডিএনসিসির আইন কর্মকর্তা, দক্ষ আইনজীবী, এনজিও কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

16 Days of activism এর সমর্থনে UNiTE Campaign এর নেতা জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুয়েতেরেস ২০৩০ সালের মধ্যে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য, বিশ্বব্যাপী এডভোকেসি, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

এই ধারাবাহিকতায় এ বছরের প্রচারাভিযান ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনব্যাপী এক্টিভিজম হিসাবে পালিত হবে। এ বছরের প্রতিপাদ্য “Orange the World: Generation Equality Stands against Rape!” যদিওবা দেশ, নাম, সময় এবং প্রসঙ্গগুলো পৃথক হতে পারে, নারী ও মেয়েরা সবসময়েই সর্বজনীনভাবেই ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা এবং নির্যাতনের শিকার হন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে #MeToo, #TimesUp, #Niunamenos, #NotOneMore, #BalanceTonPorc এ ধরণের প্রচারকৌশল যৌন সহিংসার ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাই এবারের প্রতিপাদ্য “ধর্ষণের বিরুদ্ধে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সোচ্চার হই সকলে”।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান 16 Days of activism বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বিশ্বাস করে একটি নিরাপদ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ নগর প্রত্যেকের অধিকার। সে লক্ষ্যে সরকারি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও ও সংগঠন নিয়ে সিটি কর্পোরেশন দুই দিনব্যাপী নানা কার্যক্রম করার উদ্যোগ নিয়েছে। লক্ষ্য একটাই প্রিয় ঢাকা শহরকে নারী-শিশু ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করে নিরাপদ শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
“সবাই মিলে সবার ঢাকা নারী-পুরুষ সমতা, রুখতে পারে সহিংসতা”

গুলশানস্থ শহীদ তাজ উদ্দিন পার্কে (পুরাতন ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক) ২৯-৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় এই activism এর উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি। এছাড়া এ দুই দিনে দুটি সেমিনার, বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য হুইলচেয়ার ফুটবলসহ অন্যান্য খেলা, ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রেস কনফারেন্সে মাননীয় মেয়রের সাথে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য অপরাজিতা হক এম.পি, শবনম জাহান এম.পি, নাহিদ এজহার খান এম.পি, শিউলি আজাদ এম.পি, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই, ডিএনসিসির প্যানেল মেয়র আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, ডিএনসিসির অন্যান্য কাউন্সিলরবৃন্দ, ডা. নুজহাত চৌধুরী, IPDC Finance এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুমিনুল ইসলাম এবং Action Aid এর নির্বাহী পরিচালক ফারাহ কবির।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

RSS
Follow by Email