ঢাকার পাতাল রেল প্রকল্প নিয়ে ‘ধীরে চলো নীতি’কে স্বাগত জানাচ্ছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)

নগর দর্পণ ডেস্ক

সম্প্রতি ঢাকা পাতাল রেল (সাবওয়ে) প্রকল্প উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরসমূহ ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণ করেছে, যাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। বিবিএ’র সাম্প্রতিক বোর্ড সভায় ঢাকা নগরে পরিবহন সংক্রান্ত মেট্রোরেলসহ চলমান বিভিন্ন প্রকল্প ও আশু উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়নের পর পরবর্তীতে অধিকতর পরিকল্পনাগত প্রভাব ও উপযোগিতা বিশ্লেষণপূর্বক ঢাকায় পাতাল রেল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানা গিয়েছে। ইতিপূর্বে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)’র পক্ষ ঢাকায় পাতাল রেল প্রকল্প সংক্রান্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে বলা হয়েছিল পাতাল রেল প্রকল্প ঢাকা নগরীর আর্থ-সামাজিক-পরিকল্পনাগত বিবেচনায় ব্যয়বহুল, উচ্চাভিলাষী ও অপরিণামদর্শী।

 

আইপিডি গুরুত্ব দিয়ে বলেছিল, পাতাল রেল প্রকল্পের মত ব্যয়নির্ভর, ঝূঁকিপূর্ণ ও উচ্চাভিলাষী প্রস্তাবনা নিয়ে পরিকল্পনা করবার জন্য ঢাকা নগরী এখন প্রস্তুত নয়। বরং ঢাকার যানজট সমস্যা নিরসনসহ টেকসই পরিবহন পরিকল্পনা গড়ে তোলবার জন্য কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি), সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি), ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) এ প্রদেয় প্রস্তাবনাসমূহের দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ বেগবান করা দরকার।

 

পাতাল রেল সংক্রান্ত আইপিডি’র পর্যবেক্ষণসহ সংশ্লিষ্ট সংবাদ ও এতদসংক্রান্ত বিশ্লেষণ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশের কারণে এই প্রকল্পের পরিকল্পনা-অর্থনৈতিক-সামাজিকসহ বিভিন্ন প্রভাবের বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরসমূহের অধিকতর অনুধাবনে সহায়ক হয়েছে বলে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট মনে করে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে গণমাধ্যমের আন্তরিক ভূমিকার জন্য আমরা আইপিডি’র পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

 

পাশাপাশি ঢাকায় পাতাল রেল প্রকল্প নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরের বিপরীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্মানিত নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অধিকাংশ নাগরিকই ঢাকাকেন্দ্রিক এই ধরনের অতি ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণ না করে যোগাযোগ ও পরিবহন পরিকল্পনার অন্যান্য সমাধান যেমন কমিউটার ট্রেন, লাইট রেল, মানসম্মত বাস সার্ভিস, বিআরটি প্রভৃতি তুলনামূলকভাবে ব্যয় সাশ্রয়ী উদ্যোগকে আন্তরিকভাবে বিবেচনায় নেয়ার বিষয়ে মতামত দিচ্ছেন, যা আমাদের আর্থ-সামাজিক-পরিকল্পনাগত বিবেচনায় ব্যয় সাশ্রয়ী ও সহজে বাস্তবায়নযোগ্য। পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে ঢাকাকেন্দ্রিক অতি বিনিয়োগ ও উন্নয়নকেন্দ্রিকতার বিপরীতে সারা দেশের আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধাদির বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে ঢাকার উপর পরিবহনসহ সামগ্রিক চাপ কমানো সম্ভব বলে পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের বহুল উদ্ধৃত মতামতসমূহ আমাদের নাগরিকদের পক্ষ থেকেও প্রতিফলিত হয়েছে। আইপিডি মনে করে, পাতাল রেল প্রকল্প নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া ‘ধীরে চলো নীতি’র মাধ্যমে নাগরিকদের মতামতকে সম্মান দেয়া হয়েছে, যা সরকারের জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এবং উন্নয়ন পরিকল্পনায় টেকসই ভাবনা বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। এইপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে উচ্চ ব্যয় সম্পন্ন পরিবহন ও যোগাযোগ প্রকল্প গ্রহণের আগে গণশুনানির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মতামত নেবার উপর গুরুত্ব দিলে সরকারের জন্য জনবান্ধব ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হবে বলে মনে করে আইপিডি।

 

আমরা অবগত আছি যে, ঢাকায় পাতাল রেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যে ৩২১ কোটি টাকার সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা প্রায় শেষের পথে। ইতিপূর্বে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন করতে ১১০ কোটি টাকার সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শেষে প্রকল্পটিকে বাস্তববায়নের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। অনুরূপ পরিণতি হয়েছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে উড়াল এক্সপ্রেসওয়ে সড়ক পথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ৯৮ কোটি টাকার, যেই প্রকল্প পরবর্তীতে বাতিল হয়ে যায়। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর প্রকল্প লাভজনক বলে বিবেচিত না হলে প্রকল্প অনুমোদন না দেয়ার বিষয়টি সরকার ও রাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক। এতে ব্যয়বহুল ও উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থ ও সম্পদের অপচয় থেকে রাষ্ট্র রক্ষা পায়।

 

অন্যদিকে এইধরনের ব্যয়বহুল ও আমাদের আর্থ-সামাজিক-পরিকল্পনাগত বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যবিহীন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গিয়ে রাষ্ট্রের ও জনগণের মূল্যবান অর্থের যে অপচয় হচ্ছে সে ব্যাপারে রাষ্ট্র ও সরকারের গভীর দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে আইপিডি মনে করে। এই ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নামে কারো অনৈতিক উদ্দ্যেশ্য ও অর্থযোগ হচ্ছে কিনা, তার ও নির্মোহ বিশ্লেষণ রাষ্ট্রের করা প্রয়োজন। একইসাথে এই ধরনের উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন পরিকল্পনার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পূর্বে দেশের পেশাজীবি ও বিশেষজ্ঞদের সাথে আন্তরিক আলোচনা ও প্রাক-সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ (প্রি ফিসিবিলিটি স্টাডি) করলে এই ধরনের অর্থের অপচয় এড়ানো যাবে বলে আইপিডি মনে করে।

 

সরকারের তরফ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি ও বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণের আগে সামগ্রিক উপযোগিতা গভীরভাবে যাচাই করে প্রকল্প গ্রহণের জন্য দেয়া নির্দেশনা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরসমূহ মেনে চলবে বলে আশা করছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট। একসাথে এই ধরনের বৃহৎ পরিকল্পনা উদ্যোগ ও বড় প্রকল্পসমূহের ব্যাপারে সরকার বৃহত্তর জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে আগামীতেও সুচিন্তিত ও সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিবে বলে প্রত্যাশা করে আইপিডি। আমরা একইসাথে বিশ্বাস করি, সামনের দিনগুলোতেও এই ধরনের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উদ্যোগসমূহের ব্যাপারে নির্মোহ বিশ্লেষণ প্রকাশের মাধ্যমে বৃহত্তর জনস্বার্থ ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম এভাবেই আন্তরিক ভূমিকা পালন করে যাবে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

RSS
Follow by Email