পরিকল্পনার অভাবে অপরিকল্পিত উন্নয়নের মুখে বাংলাদেশ: বিশেষজ্ঞদের মতামত

নিউজ ডেস্কঃ
বাংলাদেশে জাতীয় ভৌত পরিকল্পনার অভাবে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম অপরিকল্পিত ও বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, পরিকল্পিত উন্নয়নের মূলনীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরিবেশ-প্রতিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

শনিবার ঢাকার বিলিয়া মিলনায়তনে সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ (সিইউএস) আয়োজিত “রাজধানীর ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন” শীর্ষক সেমিনারে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদ মো. নুরুল্লাহ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিইউএস-এর চেয়ারম্যান, ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

ভৌত পরিকল্পনার ঘাটতি ও এর প্রভাব

মূল প্রবন্ধে প্রকৌশলী মো. নুরুল্লাহ জানান, একটি উন্নত দেশের উন্নয়নে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক সমান্তরালভাবে কাজ করে। এগুলো হল:

১. সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনা – যা বাংলাদেশে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

২. জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা – যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাংলাদেশে এখনও এটি নেই। এ বিষয়ে কোনো আইনি বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বিদ্যমান নয়।

৩. প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং – যা শুরু হয়েছে কিন্তু এর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো খুবই দুর্বল।

তিনি বলেন, ভৌত পরিকল্পনা ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ বাড়ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

উপযুক্ত পরিকল্পনার জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পিত উন্নয়নের তিনটি মডেল রয়েছে: ভৌত পরিকল্পনা, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা, এবং স্থানিক পরিকল্পনা। এ তিনটির মধ্যে কোনটি বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা প্রয়োজন।

অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও এ বিষয়ে মতামত প্রদান করেন:

•অধ্যাপক ড. গোলাম মরতুজা, সিইউএস-এর সহ-সভাপতি, স্থানিক পরিকল্পনার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ভৌত, পরিবেশ এবং উন্মুক্ত স্থানসহ সকল বিষয়ে সমাধান সম্ভব।

•শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক, পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য স্থানিক পরিকল্পনার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

•অধ্যাপক ড. শফিক-উর-রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বলেন, ভৌত ও সামাজিক কাঠামোর মধ্যে ভারসাম্য আনতে পরিকল্পনা জরুরি।

•অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বলেন, ঢাকার ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ আগামী ২০-২৫ বছর পর্যন্ত চলবে। এ জন্য সময়োপযোগী পরিকল্পনার প্রয়োজন।

•স্থপতি সালমা এ. শফি ঢাকার স্ট্রাকচার প্ল্যানের আওতায় বিস্তারিত পরিকল্পনার অভাবকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেন।

সেমিনারের সমাপ্তিতে বিশেষজ্ঞরা জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনের আহ্বান জানান। তারা বলেন, সময়োপযোগী উদ্যোগ না নিলে পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না এবং পরিবেশের অবক্ষয় অব্যাহত থাকবে।

৩০ নভেম্বর ২০২৪



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

RSS
Follow by Email