সিটি কর্পোরেশনের সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের অফিসগুলোকে পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড কমপ্লেক্স বা সেবা সেন্টার করার প্রস্তাব বিআইপির
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
অন্তর্ভূক্তিমূলক নগর উন্নয়ন পরিকল্পনার দর্শনে শহরের সকল এলাকার উন্নয়নে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের অফিসগুলোকে পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড কমপ্লেক্স তৈরির বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় আনতে হবে। সিটি কর্পোরেশন যে সকল নাগরিক সুবিধাদি প্রদান করে থাকে তা এই কমপ্লেক্স থেকে পরিচালিত হতে পারে। ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করতে হলে বিশেষ দুই একটা অঞ্চলের উন্নতি নয়, আমাদের সব অঞ্চলকে নিয়ে ভাবা দরকার। সে কারণে সিটি বাজেট তৈরী করার সময় যেন স্থানিকভাবে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়। খাতভিত্তিক বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে অঞ্চলভেদে যদি বাজেট বরাদ্দ করা হয় তবে দুর্বল বা অপেক্ষাকৃত কম সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্ত অঞ্চলগুলো তাদের জন্য বেশি বাজেট বরাদ্দের জন্য দাবি করতে পারবে। তাদেরকে নিয়ে আমরা একসঙ্গে আগাতে পারবো এবং ঢাকা শহরের টেকসইউন্নয়ন নিশ্চিত হবে। এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় শিশু, প্রৌঢ় ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
অদ্য ২৩ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, সকাল ১১ টায় রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ারে ‘ঢাকার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনঃ নগর পরিকল্পনাবিদদের পক্ষ থেকে নাগরিক ইশতেহার’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইনস্টিটিউটের পক্ষে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নগর পরিকল্পনাবিদদের পক্ষ থেকে নাগরিক ইশতেহার শীর্ষক একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বি.আই.পি.-র সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর কার্যাবলী এবং দায়িত্ব মূলত স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ দ্বারা নির্ধারিত। এই আইনের তৃতীয় তফসিলে বিশদভাবে এই কার্যাবলীর বিবরণ দেয়া আছে। সাধারণ জনগণের প্রতিনিধি হবেন মেয়র ও কাউন্সিলরগণ এবং নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলররা স্থানীয় জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। স্থানীয় সরকারের সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু ওয়ার্ড কাউন্সিল কেন্দ্রিক হওয়া উচিত্। এতে করে এলাকার মানুষদের ভেতর নিজের এলাকায় উন্নয়নে অংশীদার হবার এবং অংশগ্রহণের আগ্রহ জন্মাবে। স্থানীয় মানুষজন জানবে যে, তার যে কোনো কাজের জন্য এলাকার কাউন্সিলরের অফিসেই যেতে হবে এবং ওখানে গেলে কী ধরণের সেবা সে পাবে। এলাকার মানুষদের সঙ্গে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং অফিসের সরাসরি যোগাযোগ হবে। আমরা প্রায়ইএলাকায় মশানিধন, জলাবদ্ধতা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা প্রসঙ্গে জনসচেনতা ও জনসম্পৃক্ততার কথা বলে থাকি। যখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের যোগাযোগ তৈরি হবে, তখনই জনসম্পৃক্ততা তৈরী হবে । এভাবে সব কর্মকান্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলর জনগনকে সম্পৃক্ত করতে পারে। এ কারনে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের যে কোনো উন্নয়ন কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে।
বি.আই.পি.-র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সকল সেবাগুলো ওয়ার্ড কাউন্সিল ভিত্তিক হতে হবে। সকল কেন্দ্রবিন্দু ওয়ার্ড কাউন্সিল হলে, আমরা মানসম্মত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পেতে পারি। এতে জনগনের সাথে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ততা বাড়বে।
বি.আই.পি.-র উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক পরিকল্পনাবিদ ড. গোলাম রহমান বলেন, নগরপিতাদের মানুষের সাথে সম্পৃক্ততা আছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তবেই অনেক রকম সমসস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, নগরে নাগরিক পরিসেবা নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা শহরে বসবাসযোগ্যতা নিয়ে কাজ করতে হবে, এজন্য নগর ব্যবস্থাপনা কাজে পরিকল্পনাবিদদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে সিটি কর্পোরেশনের দায়দায়িত্ব এবং জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে তাদের দায়দায়িত্ব, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের পক্ষ থেকে নিম্নাক্ত বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
• ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং ওয়ার্ড এর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা
ওয়ার্ড প্রোফাইল তৈরী করার মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক নাগরিক সেবা ও অবকাঠামোর বিদ্যমান অবস্থা ও করণীয়সমূহ নির্ধারণের মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ। ওয়ার্ডভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা (পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা) গ্রহণ করে বার্ষিক বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা। অবকাঠামো পরিকল্পনা / ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান প্রণয়ন করে বাজেট পরিকল্পনা করা। নতুন ওয়ার্ডগুলোর নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা।
• ওয়ার্ড কমপ্লেক্স তৈরী করা
সিটি কর্পোরেশনের সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের অফিসগুলোকে পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড কমপ্লেক্স তৈরির বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় আনতে হবে। সিটি কর্পোরেশন যে সকল নাগরিক সুবিধাদি প্রদান করে থাকে তা এই কমপ্লেক্স থেকে পরিচালিত হতে পারে। একটি কমিউনিটি সেন্টার এবং লাইব্রেরী থাকতে পারে। অথবা সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও অন্যান্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিক সুবিধা দিয়ে থাকে, যেমন—নগর স্বাস্থ্য সেবা, ওয়াসা, বিদ্যুৎ ইত্যাদির একটা করে ছোট অফিস উক্ত কমপ্লেক্সে থাকতে পারে।
• অন্তর্ভূক্তিমূলক শহর ও এলাকাভিত্তিক (ওয়ার্ডভিত্তিক) অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা
অন্তর্ভূক্তিমূলক নগর উন্নয়ন পরিকল্পনার দর্শনে শহরের সকল এলাকার উন্নয়নে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করতে হলে বিশেষ দুই একটা অঞ্চলের উন্নতি নয়, আমাদের সব অঞ্চলকে নিয়ে ভাবা দরকার। সে কারণে সিটি বাজেট তৈরী করার সময় যেন স্থানিকভাবে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়। খাতভিত্তিক বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে অঞ্চলভেদে যদি বাজেট বরাদ্দ করা হয় তবে দুর্বল বা অপেক্ষাকৃত কম সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্ত অঞ্চলগুলো তাদের জন্য বেশি বাজেট বরাদ্দের জন্য দাবি করতে পারবে। তাদেরকে নিয়ে আমরা একসঙ্গে আগাতে পারবো এবং ঢাকা শহরের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
• জনদূর্ভোগ কমানোর জন্য এলাকাভিত্তিক ‘উন্নয়ন তদারকি দল’ গঠন
• অনলাইন কর ও ফিস প্রদানের ব্যবস্থা এবং সেবাপ্রাপ্তির ডিজিটালাইজেশন
• সম্পত্তির মানচিত্রের হালনাগাদ করা
• জলাবদ্ধতা ও যানজট সমস্যা সমাধানে নেতৃত্ব এবং সমন্বয়কের ভূমিকা পালন
• স্থায়ী কমিটিসমূহ কার্যকর করা
• নগর দরিদ্র ও বস্তিবাসীদের জন্য নাগরিক পরিসেবা প্রদান
• পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কিত সুপারিশসমূহ
• পার্ক, খেলার মাঠ ও গণপরিসর নিশ্চিত করা
• মানুষকে ও কমিউনিটি’কে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু করা
শহরের ঐতিহাসিক ভবন, স্থাপনা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। বিশদ এলাকা পরিকল্পনা প্রণয়ন সহ বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় ও সিদ্ধান গ্রহণে এলাকাবাসী ও ওয়ার্ড কাউন্সিলকে সম্পৃক্ত করা। এলাকাভিত্তিক ও পাড়াভিত্তিক কমিউনিটি তৈরী করার জন্য সামাজিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। মানুষকে ও কমিউনিটি’কে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু করা এবং সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়ন যেন নিশ্চিত হয় সে ব্যাপারে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদান করা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ আরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বি.আই.পি.-র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ। এছাড়াও সংবাদদ সম্মেলনে বি.আই.পি.-র বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ মোঃ রেজাউর রহমানসহ অন্যান্য পরিকল্পনাবিদগণ উপস্থিত ছিলেন।