চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব মেয়রকেই নিতে হবে-স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
নিউজ ডেস্কঃ
সকল প্রতিষ্ঠানকে ঐক্যবদ্ধ করে চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম।
তিনি আজ চট্টগ্রামে জাতীয় স্থানীয় সরকার ইন্সটিটিউট আয়োজিত পুরাতন নগর ভবনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরগণের জন্য ‘সিটি কর্পোরেশন প্রশাসন অবহিতকরণ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশের সিটি কর্পোরেশন তাদের নিজস্ব অর্থ দিয়ে মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার এমনকি বিমানবন্দর নির্মাণ করে থাকে। এই জন্যই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে নগর পিতা বলা হয়। বিশ্বের অন্য দেশগুলো পারলে আমরা কেন পারব না। চট্টগ্রামের উন্নয়নে মেয়রকেই দায়িত্ব নিতে হবে। চট্টগ্রামের সকল সেবামূলক সংস্থার সাথে সমন্বয় করে মেয়রকে এ দায়িত্ব নিতে হবে।
কাউন্সিলরদেরকে সততা, স্বচ্ছতার মাধ্যমে কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করে মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন আপনারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েছেন মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য। সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। অন্যায়-অবিচার, দূর্নীতি ও অনিয়ম করার জন্য নয়। শুধু অর্থ বরাদ্দ দিলেই উন্নতি হয় না এর জন্য দরকার সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা মেয়র-কাউন্সিলর সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেয়া এবং সমাজের সকল অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্য নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডকে দশটি সাব জোনে ভাগ করে সকল শ্রেণীর মানুষকে সম্পৃক্ত করে কমিটি গঠন করার তাগিদ দিয়ে মন্ত্রী। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাজধানী উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে এই নগরকে নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করে। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে এই নগরীর অবদান উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রামের আরো উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
মোঃ তাজুল ইসলাম জানান, প্রকৌশলী-ঠিকাদারসহ যারা উন্নয়ন কাজ করবেন সেগুলো টেকসই হতে হবে অর্থাৎ কাজের মান নিশ্চিত করতে হবে। কাজ করার সময় অর্থ অপচয়, সময় বৃদ্ধি এবং নিম্ন মানের কাজ করা যাবে না।
এপ্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আরও জানান, খাল খনন প্রকল্পসহ সকল চলমান প্রকল্পের কার্যক্রম মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে একটি মনিটরিং সেল কাজ করছে। কোথাও কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অনিয়ম করে অর্থ উপার্জনের কোনো সুযোগ নেই। কেউ করলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
নগরীর খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য জার্মান থেকে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে যা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকেও দেয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই মেশিন দিয়ে একদিনে বিপুল পরিমাণ কচুরিপানা ও অন্যান্য আবর্জনা পরিষ্কার করা সম্ভব হবে। এসময় যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে দেয়ারও জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে আর্থিকভাবে সক্ষম হতে হবে। সরকারের উপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সরকারের দায়িত্ব জনগণকে রাজস্ব প্রদান করার সক্ষম করে গড়ে তোলা। আর উন্নয়নের সুফল পেতে হলে জনগণকে অবশ্যই রাজস্ব দিতে হবে। চট্টগ্রামে যে পরিমাণ রাজস্ব আহরণের সুযোগ রয়েছে অর্থাৎ স্বাভাবিক নিয়মে যে রাজস্ব আদায়ে হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। জনগণকে নাগরিক সেবা দিলে তারা অবশ্যই রাজস্ব দেবে। সেটা মানুষকে বোঝাতে হবে। জনগণের কাছে জোর করে রাজস্ব আদায়ের সুযোগ নেই।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সারা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ কারণে চট্টগ্রামের উন্নয়নে অগ্রধিকার দেওয়া হবে। চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা এবং সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে মেয়রকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
এছাড়া, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ, জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফর, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকীসহ মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন
এর আগে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বাস্তবায়িত নগরীর টাইগারপাস থেকে পাহাড়তলী রেল লাইন পর্যন্ত রাস্তার উদ্বোধন এবং বদ্দারহাট বারইপাড়া হতে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন কাজের উদ্বোধন করেন।
পরে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে জেলা পরিষদ ভবনের মূল অংশের নির্মাণ কাজের, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সেলাই মেশিন ও অন্যান্য উপকরণ প্রদান এবং জেলার গৃহহীনদের জন্য জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত গৃহের চাবি হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।